তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম | তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ও নিয়ত – Tahajjud namaz bangla

তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল নামে পরিচিত।সকল মুসলমানদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ হচ্ছে ঐচ্ছিক ইবাদত। অর্থাৎ মুসলমানদের যেমন পাঁচ ওয়াক্ত বাধ্যতামূলক নামাজ আদায় করতে হয় তাহাজ্জুদ নামাজ সেই দিক থেকে বাধ্যতামূলক নয়। 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম - তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত ও নিয়ত - Tahajjud namaz bangla - bddraft.com

আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন এবং তার অনেক সাহাবীদের এই নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহিত করতেন।তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য নিয়ত কিভাবে করবেন, তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত এই নিয়েই থাকছে আজকের বিডি ড্রাফট নিয়ে এলো এই  পোস্টটি। 

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

মুসলমানদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ফরজ না হলেও তাহাজ্জুদ নামাজের রয়েছে অসীম তাৎপর্য। কেননা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের নিয়মাবলী রয়েছে ও সঠিক সময় রয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশের দিকে পড়াটা উত্তম।

অনেকের এই সময়টাতে ঘুম ভাঙ্গে না যার কারণে তারা চাইলে এশার নামাজের পর দুই রাকাত ও বিতরের নামাজের আগে পড়ে নিতে পারে।তাহাজ্জুদ নামাজ সর্বনিম্ন দুই রাকাত থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়।তবে কেউ যদি ১২ রাকাতের বেশি তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে থাকেন তাহলেও কোন সমস্যা নেই।তবে ইসলামিক চিন্তাবিদদের মতে তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত পড়াই যথেষ্ট। অনেকের প্রশ্ন রয়েছে তাহাজ্জুদ নামাজ জামাতে পড়া যায় কিনা। শুধুমাত্র রমজান মাস ব্যতীত তাহাজ্জুদ নামাজ মাঝেমধ্যে জামাতে পড়া জায়েজ রয়েছে।নিচে কিভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বেন তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলোঃ-

➡️প্রথমে তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করে আল্লাহু আকবার বলতে বলতে হবে। 

➡️নিয়ত করা শেষ হয়ে গেলে এবার ছানা পড়তে হবে। 

➡️তারপরে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা মেলানো অর্থাৎ কেরাত পড়তে হবে। 

➡️তারপরে যথাক্রমে নামাজের জন্য রুকু ও সেজদা আদায় করতে হবে। এইভাবে প্রথম রাকাত সম্পন্ন হলে দ্বিতীয় রাকাত পড়তে হবে এবং তারপরে তাশাহদুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরনোর মাধ্যমে নামাজ আদায় সম্পন্ন করতে হবে। 

➡️পরিশেষে মোনাজাত করতে হবে তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত |  তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত

তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট নিয়ত রয়েছে। অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার আগে নিয়ত করে নিতে হবে। তাহলে অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক তাৎপর্য মিলবে।তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত নিচের দেওয়া হলো:-

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ رَكَعَتِى التَّهَجُّدِ – اَللهُاَكْبَر

বাংলা অর্থঃআমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ত করছি। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বেঁধে নামাজ আদায় করা শুরু করে দিতে হবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় 

তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত ফজরের আগে পড়া উত্তম। তবে অনেকের এই সময়টাতে ঘুম না ভাঙ্গার কারণে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারেন না। তাহাজ্জুদ নামাজের মূল সময় রাত দুইটা থেকে শুরু হয়ে থাকে।যারা এই সময়টাতে জেগে উঠতে পারেন না তারা চাইলে এশার নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত অথবা বিতর নামাজের আগে পড়ে নিতে পারেন। তাহলে তাহাজ্জুদ নামাজ সঠিক সময়ে পড়া হয়ে যাবে।

তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত

সাধারণত ফরজ নামাজের পর অন্যান্য সুন্নত ও নফল নামাজগুলোর চেয়ে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত অনেক বেশি। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছিলেন-আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক রাত্রে দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ(সবার অগোচরে) বাকি থাকে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু সালাম আরো বলেছেন:-যে ব্যক্তি সাধারণত রাত্রে ঘুম থেকে জেগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার জন্য প্রস্তুতি নেয় এবং সে তার স্ত্রীকেও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য উঠতে বলে ও স্ত্রী যদি না উঠে স্ত্রীর মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি মহান আল্লাহতালা রহমত বর্ষণ করে থাকেন।অর্থাৎ স্বামী স্ত্রী দুজনের জন্যই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার গুরুত্ব রয়েছে।

আবার কোন স্ত্রী যদি রাত দুইটার পরে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে জেগে ওঠেন এবং তার ঘুমে বিভোর থাকা স্বামীকে চোখে পানির ছিটে মেরে জাগিয়ে তুলেন সালাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে তাহলে তার ওপর মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত বর্ষিত হবে।কেয়ামতের বিচারের  সময় যে ব্যক্তি সহজ হিসাব-নিকাশের আশা করতে চান তাদেরকে অবশ্যই নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে হবে। 

শ্রেষ্ঠতম মুফাসসিরে কোরআন আবদুল্লাহু বিন আব্বাসের ভাষ্যমতে-যে ব্যক্তি হাশরের ময়দানে সহজ হিসাব নিকাশ কামনা করে তার অবশ্যই উচিত রাতের তৃতীয়াংশে জেগে ওঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করা।তাই মুসলমানদের জন্য অবশ্যই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার যথেষ্ট ফজিলত রয়েছে। 

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত

তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত বা কত রাকাত পড়লে ভালো হবে এই নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজ সাধারণত দুই রাকাত পড়লেই হয়। তবে অনেকেই তাহাজ্জুদ নামাজ ১২ রাকাতও পড়ে থাকেন। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ দুই থেকে ১২ রাকাতের মধ্যে পড়ার জায়েজ  রয়েছে। তবে কখনো যদি তাহাজ্জুদ নামাজ ১২ রাকাতের বেশি পড়া হয়ে যায় তাহলেও কোন গুনাহ হবে না।

তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম তো ইতিমধ্যে জানা হয়ে গিয়েছে এবার জানতে হবে তাহাজ্জুদ নামাজের মোনাজাত কিভাবে করবেন।আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজে মোনাজাত করতেন যে:-

হে মহান আল্লাহতালা। আপনার কাছেই আমি আত্মসমর্পণ করলাম,আপনার ওপরই আমি ঈমান আনলাম এবং আপনার উপরই ভরসা রাখলাম, আপনার দিকেই আমি রুজু করলাম, সৃষ্টিকর্তা আপনার সন্তুষ্টির জন্যই শত্রুতাই লিপ্ত হলাম, আপনাকে আসমানের বাদশা এবং বিচারক মেনে নিলাম। তাই আপনি আমাদের আগের ও পরের সমস্ত পাপ মাফ করে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি হচ্ছেন শুরু ও শেষ মালিক।

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন ।  মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজ কেমন হবে বা মহিলারা কিভাবে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবেন এটা সম্পর্কে অবশ্যই জানা উচিত।ইতিপূর্বে অনেকেই জেনে গিয়েছেন যে তাহাজ্জুদ নামাজ দুই থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যেতে পারে। যেহেতু তাহাজ্জুদ নামাজটি ঐচ্ছিক তাই দুই রাকাত পড়ে থাকেন।তাই উপরের দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী মেয়েরা তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারবেন।বিশেষ করে মেয়েরা যদি রাতের তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন তাহলে অনেক বেশি ফজিলত পাবেন। কেননা এই সময়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করলে সরাসরি মহান আল্লাহতালার রহমত বর্ষিত হয়। 

তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা

তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সুরা পড়বেন ? অনেক অনেক ফজিলতপূর্ন সুরা পড়ে থাকেন । তাহাজ্জুদ নামাজ এর জন্য আলাদা কোনো সুরাহ নেই অর্থাৎ যে কোনো সুরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন?রাসুলুল্লাহ সাঃ যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে এ নামাজ আদায় করতেন। তাই আমাদের জন্য উত্তম হবে লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার চেষ্টা করা।

শেষকথা

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম বা তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে পড়তে হয় এই নিয়ে অনেকের ভিতরে ভুল ধারণা রয়েছে। আজকের পোস্টটি যারা বিস্তারিত ও মনোযোগ সহকারে পড়েছেন তারা অবশ্যই তাহাজ্জুত নামাজ কিভাবে পড়তে হয় ও তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কিত অনেক বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।যদি কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে না পেরে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।ধন্যবাদ। bddraft.com এর আরো সুন্দর পোস্ট পড়তে সাথে থাকুন । 

Leave a Comment