আলকুশি বীজ হলো এক ধরণের খাবার বীজ। যা দেখতে সীমের বীজের মতো। এই বীজে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ধরণের খনিজ উপাদান।
সারা বছর ধরে শরীর এবং মনকে ফিট রাখতে চিকিৎসকেরা নিয়মিত এই খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকে। চলুন তবে আজ আলকুশি বীজের পরিচিতি কি এবং আলকুশি বীজের উপকারিতা কি কি সে-সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
আলকুশি বীজ কি?
মুকুনা প্রুরিয়েন্স বা কাউঞ্চ বীজকে মূলত আলকুশি বীজ বলা হয়। লেবুজাতীয় উদ্ভিদের ফলন থেকে এই বীজ সংগ্রহ করতে হয়। ভারত এবং চীনের গ্রীষ্মমন্ডলীয় পরিবেশ এই আলকুশি বীজের চাষ বেশ ভালোই হয়।
পাশাপাশি এশিয়া, আফ্রিকা এবং আমেরিকার বেশ কিছু অঞ্চলে এই বীজের চাষ করা হয়। সমানভাবে পুষ্টিকর এবং প্রোটিনেশিয়াস লেবু জাতীয় বীজ হিসাবে এই আলকুশি বীজ বেশ জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর। আলকুশি বীজকে অনেকেই কপিকাচ্চু নামেও ডেকে থাকে।
আশা করি এখন বুঝতে পেরেছেন এই আলকুশি বীজ টা কি এবং কি কাজে ব্যবহৃত হয় এ বিষয়ে আমরা সকল বিষয়বস্তু তুলে ধরার চেষ্টা করবো আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তো অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন আশা করি সকল জিনিস জানতে পারবেন আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে।
আলকুশি বীজের পুষ্টিগুণ কি কি?
আলকুশি বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে বলে রাখা ভালো এই বীজের সৌন্দর্যও অনেককেই মুগ্ধ করে। দেখতে বেশ সুন্দর এই বীজগুলিতে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস-কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ফ্যাট, প্রোটিন, এবং গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট-ভিটামিন।
সেই সাথে প্রতিটি বীজে বিভিন্ন খনিজ উপাদানের নিশ্চয়তা তো থাকছেই। এসব গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি আলাকুশি বীজে কোলেস্টেরল এবং সোডিয়ামও রয়েছে। তবে পরিমাণগত দিক দিয়ে এই পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ একেবারেই কম।
তাছাড়া আলাকুশি বীজে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ই। এসব ভিটামিন বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য বাড়াতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে থাকে।
সেই সাথে বি কমপ্লেক্স ভিটামিন, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাসও এই বীজে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। চলুন দেখে নেওয়া যাক আলকুশি বীজে কোন পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কতটুকু:
- প্রতি ১০০ গ্রাম বীজে ৩৮৫ কিলো ক্যালোরি পুষ্টি পাওয়া যায়
- থাকে ৭% ফ্যাট
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৩%
- পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ৫%
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ২%
- ২৫% কার্বোহাইড্রেট
- ১৪% ফাইবার
- ২% সুগার
- ১০% প্রোটিন
- ২৬% ক্যালসিয়াম
- ১১% খনিজ উপাদান
- ২৭% পটাশিয়াম
- ৫% থায়ামিন
- ৭% ভিটামিন সি
- ৪.৬% ভিটামিন ই
হ্যাঁ এসবই ছিল আলকুশি বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আশা করি এ বিষয়ে আপনাদের সকল ভীতি দূর হয়েছে আপনাদের যদি এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন আর অথবা আমরা যদি কোন কিছু ভুল করে থাকি তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন আমরা পরবর্তীতে সেটি সঠিক তথ্য নিয়ে সেই তথ্যগুলো সঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করব।
আলকুশি বীজের উপকারিতা কি?
এই আলকুশি বীজের উপকারিতা বলতে গেলে শেষ হওয়ার নয় কেননা এর উপকারিতা অনেক রয়েছে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সাথে এর উপকারিতা এবং এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে সকল তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। পরিচিতি এবং পুষ্টিগুণ জানার পর চলুন আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আলকুশি বীজের উপকারিতা কি সে-সম্পর্কে জেনে নিই:
পুষ্টিগুণে ভরপুর
ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, প্রোটিন, ফাইবার, পর্যাপ্ত ক্যালোরি এবং দরকারি ফ্যাট থাকার কারণে আলকুশি বীজকে পুষ্টির রাজা বলা হয়ে থাকে।
এছাড়াও আরও এর উপকারিতা রয়েছে আমরা সেই উপকারিতা গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতেছি আশা করি আপনাদের অনেক কাজে লাগবে অবশ্যই সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে দেখবেন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে অবশ্যই ভুলবেন না।
লিভারের সমস্যা দূর করে
রাতে গভীর ঘুমের পরে, পাকস্থলী এবং সকালের দিকে লিভারের সমস্যা দূর করতে আলকুশি বীজের সাহায্য নিতে পারেন। বিশেষ করে সকালে নাস্তার অংশ হিসাবে এই বীজ খেলে সারাদিনের হজমশক্তি ভালো থাকে। পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় এবং লিভার সুস্থ থাকে।
আপনার পরিচিত যদি এমন কেউ এই সমস্যায় ভুগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি তাদের সাথে শেয়ার করতে অবশ্যই ভুলবেন না কেননা এই আর্টিকেলটি তাদের অনেক উপকারে আসবে।
একের ভেতর সব
আলকুশি বীজ একের ভেতর সব টাইপের খাবারের মতো কাজ করে। এতে থাকা সকল পুষ্টিগুণ রক্ত প্রবাহে শোষিত হয় এবং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, ফুসফুস, লিভার এবং কিডনিতে স্থানান্তরিত হয়। যা হজমশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং বদহজম, ফোলাভাব, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটি এবং বুকজ্বালার মতো সমস্যা দূর করে।
অ্যামিনো অ্যাসিডের নিশ্চয়তা
মূল অ্যামিনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয় আরকুশি বীজ। কারণ এই বীজে শুরু থেকেই থাকে উদ্ভিদ-ভিত্তিক উচ্চ-মানের প্রোটিন। আর আমরা তো সকলেই জানি ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে অ্যামিনো অ্যাসিড ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া বীজটিতে থাকা বিশেষ সালফার-ভিত্তিক অ্যামিনো অ্যাসিড, দেহে ভ্যালাইন এবং আইসোলিউসিন সরবরাহ করে। এই দুটো উপাদানই আবার দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
সাধারণ গমের আটাতে যে ধরণের ফ্যাট থাকে আলকুশি বীজে সে ধরণের ফ্যাট খুব একটা থাকে না। যার কারণে খাবারটিকে আপনি ডায়েট-ফ্রেন্ডলি খাবার হিসাবে খেতে পারেন। বিশেষ করে এই বীজ গুড়ো করে বিভিন্ন পিঠা, মিষ্টান্ন বানাতে পারেন।
এসব খাবারে সাধারণ খাবারের চাইতে তুলনামূলকভাবে কম ফ্যাট থাকার কারণে বাড়তি ওজন তৈরির খুব একটা চান্স থাকবে না। যারা এই ওজন নিয়ে ভুগতেছেন তারা অবশ্যই এই কাজগুলো করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনারা ফলাফল দেখতে পারবেন খুব দ্রুত।
হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে
হাড়ের ঘনত্বকে শক্তিশালী করে এই আলকুশি বীজ। বিশেষ করে প্রাকৃতিক ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস হিসাবে আলকুশি বীজের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে কেউই অজানা নয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের অনেক বেশি হাড়ের সমস্যা দেখা দেয় তারা এই বীজ খেয়ে ভালো ফল পেতে পারেন।
অস্টিওপরোসিসের লক্ষণ দূর করতেও খেতে পারেন এই বীজ। তাছাড়া গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এবং কিডনি রোগ থেকে দূরে থাকার ক্ষেত্রে আলকুশি বীজের উপকারিতা প্রায় দেখার মতো।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে
ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকলেও এই বীজ খেলে আপনার দেহের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাছাড়া ডায়াবেটিস মেলিটাসে আক্রান্ত রোগীদের উচ্চ রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করবে আলাকুশি বীজ। যাদের অনেক বেশি ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে তারা নিয়ম করে এই বীজ খেতে পারেন।
ইতি কথা
আলকুশি বীজের উপকারিতা কি সে-সম্পর্কে তো জানলেন! এবারে বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগের পালা। আশা করি এখন থেকে আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আলাকুশি বীজ থাকবে। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে কেননা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা সকল বিষয়বস্তু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
আপনাদের যদি এ বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন আমরা আপনাদের সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব তো ধন্যবাদ সবাইকে সবাই ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।