বর্তমান সময়ে অনেকের ইচ্ছা-আকাঙ্খা রয়েছে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়ার। কেননা বিসিএস ক্যাডাররা সমাজের চোখে অনেক সম্মানীয় ব্যক্তি। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য নিজের ভিতর হার না মানার মানসিকতা ও অদম্য পরিশ্রম করার ক্ষমতা থাকতে হবে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও সঠিক গাইডলাইনের অভাবে অনেকের নিজেকে গড়ে তোলা হয় না। আজকের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়ার জন্য কি কি লাগে ও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারদের বেতন কত। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-
কোন কোন বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডার আছে ও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার যোগ্যতা নিয়ে বিডি ড্রাফট এর নতুন আর্টিকেল ।
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার যোগ্যতা
যেকোনো ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা শেষ করে ইচ্ছা করলে বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন না। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য অবশ্যই কিছু যোগ্যতা লাগবে। বিসিএস ক্যাডারদের ক্ষেত্রে সাধারণত চার ধরনের যোগ্যতা বিবেচনা করা হয়ে থাকে।যেমন:-
১.শিক্ষাগত যোগ্যতা
২.নাগরিকত্ব
৩.বয়স সীমা
৪.শারীরিক যোগ্যতা
বিসিএস পরীক্ষার শিক্ষাগত যোগ্যতা। বিসিএস দিতে কত পয়েন্ট লাগে
বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে আপনাদেরকে অবশ্যই ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। স্নাতক পাস ছাড়া এই পরীক্ষায় কোনভাবেই অংশগ্রহণ করা যাবে না। আবার এই ক্ষেত্রে স্নাতকের ফলাফল নিম্নমানের হতে হবে। এসএসসি ও স্নাতক এই দুইটি পরীক্ষা সাধারণত বিসিএসের যোগ্যতা যাচাই করার জন্য ধরা হয়ে থাকে। এই দুইটি পরীক্ষার মধ্যে আপনাদেরকে যেকোনো একটিতে তৃতীয় শ্রেণি বা সমমান বা দুইটিতে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমান পেতে হবে। এর নিচে যারা ফলাফল করবে তারা কোনভাবেই বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এই হিসাবটা করা হয়েছে শুধুমাত্র যারা স্নাতক করেছেন তাদের জন্য।অর্থাৎ স্নাতকে যারা চার বছর মেয়াদী করছে পড়াশোনা করেছেন। তিন বছর মেয়াদী স্নাতকে অংশগ্রহণ করেছেন তারাই স্নাতক শেষ করেই বিসিএসে আসতে পারবেন না। তাদের স্নাতক শেষ করে আবার মাস্টার্স করতে হবে এবং মাস্টার্স শেষ করে তারপর বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে হবে।
কোন কোন বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডার আছে – বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার যোগ্যতা – BCS Education Qualification – NeotericIT.com
বিসিএস পরীক্ষার জন্য বয়সসীমা
বিসিএসের বয়সসীমা কত বা বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বয়সীমা কতোর মধ্যে থাকতে হয় এই নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। যেকোনো বয়সের পরীক্ষার্থী ইচ্ছা করলেও বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। নিচে এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা দেওয়া হলো:-
সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রেঃসাধারণ যে সকল প্রার্থী রয়েছে বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলার দেওয়ার মাসের প্রথম তারিখে বিসিএস আবেদনকারী ব্যক্তির বয়সসীমা হতে হবে ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ বিসিএস পরীক্ষার জন্য যেই মাসে সার্কুলার দেওয়া হয়েছে সেই মাসের এক তারিখ পর্যন্ত ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে বয়স থাকলে আপনি বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এর মধ্যে আপনার বয়স যদি ২১ বছরের কম হয়ে থাকে এবং ৩০ বছরের বেশি হয়ে থাকে তাহলে কোনোভাবেই বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
বিশেষ কিছু প্রার্থীদের ক্ষেত্রেঃবিশেষ প্রার্থী বলতে এখানে সাধারণত মুক্তিযোদ্ধা কন্যা সন্তানদের ও প্রতিবন্ধীদের কথা বলা হয়েছে। এদের বয়সসীমা সাধারণ প্রার্থীদের থেকে দুই বছরের বেশি হলে সমস্যা নেই। অর্থাৎ বিসিএস পরীক্ষায় যদি এরা অংশগ্রহণ করে তাহলে এদের বয়সসীমা ২৩ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য করা হয়।
বিশেষ উপজাতি:বিশেষ কিছু প্রার্থীদের মধ্যে আবার উপজাতি রয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে যেমন সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের উপজাতি। এদের ক্ষেত্রেও সাধারণত দুই বছর বেশি বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এরাও চাইলে ৩২ বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
বিসিএস পরীক্ষার জন্য নাগরিকত্ব
বিসিএস পরীক্ষার যোগ্যতা যাচাই করার জন্য নাগরিকত্ব একটি মূল্যবান বিষয়। বাংলাদেশী নাগরিক না হলে কোনভাবেই বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে না। অর্থাৎ সরকারের অনুমতি ছাড়া কোন বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষার জন্য অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তাই বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী কে অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।
বিসিএস এর শারীরিক যোগ্যতা
বিসিএস পরীক্ষার জন্য শারীরিক যোগ্যতা সাধারণত শেষের ধাপে যাচাই করা হয়। আগে প্রিলিমিনারি রিটেন ও ভাইবা পরীক্ষা দিতে হয়।এই পরীক্ষাগুলো দেওয়ার পর যদি উত্তীর্ণ হতে পারেন তাহলে সাধারণত শারীরিক যোগ্যতা যাচাই করা হয়ে থাকে। বিসিএস পরীক্ষায় শারীরিক যোগ্যতার মধ্যে অনেকগুলো দিক রয়েছে যেমন: ওজন, বক্ষ, উচ্চতা, চোখ, মূত্র ইত্যাদি। লিখিত ও ভাইবা সব পরীক্ষায় যদি উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন কিন্তু যদি মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হন তাহলে কোন ভাবেই নিয়োগ পাবেন না।তাই বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার আগে এগুলো জেনে ফিট থাকা খুবই জরুরী।
মেডিকেল টেস্টে যা যা যা যাচাই করা হয়ে থাকে
➡️উচ্চতা, ওজন ও বক্ষ পরিমাপ
➡️ মূত্র পরীক্ষা
➡️ দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা
পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রেঃ পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে তাদের সর্বনিম্ন উচ্চতা ৫ ফুট বা তার বেশি হতে হবে । তাছাড়া পুরুষ প্রার্থীদের সর্বনিম্ন ওজন হতে হবে ৪৯.৯৯ কেজি। পুলিশ ও আনসার ক্যাডারদের জন্য সাধারণত উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি লাগবে ও ওজন হতে হবে ৫৪.৫৪ কেজি। ওজন যদি কোন ভাবে কম হয়ে থাকে তাহলে সেটা বাড়ানোর জন্য সময় দেওয়া হয়ে থাকে।
মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে: মহিলা প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে তাদের সর্বনিম্ন উচ্চতা হতে হবে ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি। তাছাড়া সর্বনিম্ন ওজন হতে হবে ৪৩.৫৪ কেজি। পুলিশ ও আনসার মহিলা ক্যাডারদের জন্য উচ্চতা দরকার হবে পাঁচ ফুট এবং ওজন হতে হবে ৪৫.৪৫ কেজি।
তাছাড়া পরিশেষে প্রার্থীদের মূত্র পরীক্ষা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করানো হয়ে থাকে।দুটি পরীক্ষায় বিসিএস পরীক্ষার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একটি মেডিকেল টিম গঠন করে থাকেন। এই পরীক্ষা বাদে বাকি সব পরীক্ষায় পাশ করে গেলেও এই পরীক্ষার ফলাফল সাধারণত বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনকে জানানো হয়ে থাকে।
কোন কোন বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডার আছে
বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে। এখানে যারা পড়াশোনা করে থাকেন তাদের অনেক সাবজেক্ট রয়েছে কিন্তু বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সকল বিষয় থাকে না। তাই কোন কোন বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডার আছে এই সম্পর্কে নিচে কিছুটা ধারণা দেওয়া হলো:-
শিক্ষা ক্যাডার রয়েছে মোট ৩৯ টি বিষয়ে।
মানবিক বিভাগের কোন কোন বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডার রয়েছে তা উল্লেখ করা হলো (Faculty of Arts)
➡️বাংলা
➡️ইংরেজি
➡️ইতিহাস
➡️আরবি
➡️ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
➡️দর্শন
➡️ সংগীত
➡️ সংস্কৃত
➡️ইসলামী শিক্ষা
➡️ পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ
➡️ গ্রন্থাকার বিজ্ঞান
উপরে যে সকল বিষয়গুলো দেখতে পাচ্ছেন এর মধ্যে সবথেকে বাংলা ও ইংরেজিতে পদ বেশি থাকে। আর এই পদগুলো সাধারণত মানবিক বা আর্টস নিয়ে যারা পড়াশোনা করে থাকে তারা পেয়ে থাকেন।
বিজ্ঞান বিভাগে কোন কোন বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডার রয়েছে
➡️ পদার্থবিদ্যা
➡️ গণিত
➡️ কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
➡️ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
➡️ উদ্ভিদবিদ্যা
➡️ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
➡️ কৃষিবিজ্ঞান
➡️ প্রাণিবিদ্যা
➡️ ভূগোল
➡️ মনোবিজ্ঞান
➡️ মৃত্তিকা বিজ্ঞান
➡️ পরিসংখ্যান
এই বিষয়গুলোতে সাধারণত বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া যায়।
সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের যে যে বিষয়ে বিসিএস দেওয়া যায়
➡️ সমাজবিজ্ঞান
➡️ সমাজ কল্যাণ
➡️ রাষ্ট্রবিজ্ঞান
➡️ অর্থনীতি
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে যে যে বিষয়ে বিসিএস দেওয়া যায়
➡️একাউন্টিং
➡️ম্যানেজমেন্ট
➡️ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স
➡️ফিনান্স
➡️মার্কেটিং
➡️ব্যবস্থাপনা বা ম্যানেজমেন্ট
➡️ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম
তাছাড়া আরো অন্যান্য অনুষদের মধ্যে চারু ও কারুকলা, গ্রাহসথ অর্থনীতি ও আই.ই.আর গণের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটির যারা সম্পূর্ণ ও বিস্তারিত মনোযোগ সহকারে করেছেন তারা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা ও কোন কোন বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডার আছে এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি কোন বিষয়ে সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে বা এই নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনার অতি মূল্যবান প্রশ্নটির খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর প্রদান করার চেষ্টা করা হবে। ধন্যবাদ।